Tuesday, February 5, 2008

নেইলকাটার

কখগ: টাক-ডুমা-ডুম

সকালের সিফটে অফিস থাকলে এই সময়টাতে আমি তবলা বাজাই। টাক-ডুমা-ডুম-টাক-টাক না; হালকা লয়। তাও নেহাত আস্তে নয়। আর এই কারণেই এই অফিসটা আমার মনপুত হয়েছে। বলবার কেউ নেই, ''করো তোমার মনে যাহা লয়'' অবস্থা। বেতন একটু অনিয়মিত এই যা ! রাতে ঘুম আসে না। তাই সাড়ে পাঁচটায় চলে আসি না ঘুমিয়েই। সকালের বুলেটিনে, আগের দিনের ফলো-আপ রিপোর্ট থাকলে ওটাকেই প্রেফারেন্স দেই। না হলে একটা ইন্ডিভিজ্যুয়াল ''উভ''। উভে রিপোর্টারের কণ্ঠ যায় না, স্ক্রিপ্ট দেখে প্রেজেন্টার ডাটের সাথে গটগটিয়ে পড়ে যায়। স্ক্রিপ্ট লিখে স্টোরির ফুটেজটা ডিজিটাইজ করে, ৩০ সেকেন্ডের মতো প্রাসঙ্গিক ভিডিও কাটিয়ে আলাদা ক্যাসেটে ডাউন-লোড নিই। পৌঁছে দিই ''পি সি আর''-এ। কি ব্যাপার... সাউন্ডের হারুন ভাই বা জেমী বা পিনাকী রোজারিও যেই থাক, ইশারায় এটুকু কথা হয়। ব্যাস কাজ শেষ। এরপর সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কেবল ''এ পি টি এন''-এর ফিড ধরে যাওয়া। স্লাগ সিটে স্টোরিগুলোর নাম লিখে-- খালাস। দুপুরের বুলেটিনের জন্য অন্তত একটা প্যাকেজ রিপোর্ট তৈরীর পরিকল্পনা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। তখন ঘুম-ঘুম লাগে। ঠিক ঘুম না, শরীরটা কেমন হালকা অথচ শক্ত হয়ে আসে। মনে হয় ভেতর থেকে খোকলা অথচ হাড়ের মতো পেশীগুলো খুঁট বনে যাচ্ছে। মাথা নুয়ে আসে আপনাতেই। ডেস্কে মাথা রাখলে ঘুম আসে না, আসে ঘোর। অন্তত ৫-৭টা টিভি সেট থেকে হরেক চ্যানেলের শব্দ মিলেমিশে একটা কেওয়াটিক বিভ্রম তৈরী করে। বিভ্রমই তো! সেই ঘোরে আজ যখন তবলা বাজাচ্ছিলাম, তখন দেখি—নিউটাউনের বিহারী কোয়ার্টার। ৭ নম্বর ব্লক, কে লাইনের ১১ নম্বর বাড়ি। বাইরের সদর দরজা একবার ঘুণে ধরার পর আর লাগানো হয় নি। বাবা নেই, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এ সময়টায় রঘু কাকা আসে। নিজের কাকা নয়, হয় না অনেক সময়—অনেক দিনের সম্পর্ক, সেই রকম আর কি। রঘু কাকা এসে মাকে আজগুবে এক গল্প শোনাচ্ছে। মা’র খুব উদ্ভট গল্পে বিশ্বাস। কিন্তু শোনা শেষে মা একটা অবিশ্বাসের হাসি হাসতে পারে অমায়িক। সেই হাসির ভয়ে কিনা কে জানে, কাকা আজ নিয়ে এসেছে পেপার কাটিং। কাকা পেপার দেখে দেখে পোড়ে শোনায়—

সচিত্র প্রতিবেদন: ছবির মেয়েটির নাম রাহেলা। তাহার বয়স যখন মাত্র ৩ দিন তখন তাহার আপন মা তাহার মুখে এক ফোটা কুকুরের দুধ ঢালিয়া দেয়। কারন, পরপর ৬টি বাচ্চা মারা যাইবার পর ডাক্তার বলিয়াছিলেন, বাচ্চা বাঁচাইতে হইলে তাহাকে কুকুরের দুধ খাওয়াইতে হইবে, তাও জন্ম গ্রহনের অব্যাহতি ৩ দিনের মধ্যেই। কিন্তু ২ দিনেও ডাক্তারের উপদেশ অনুযায়ী আমল না করায়, ৩য় দিবস হইতে রাহেলার মৃগীর মতো অবস্থা হইতে থাকে। শেষে অবস্থা বেগতিক দেখিয়া তাহাকে মাত্র একফোটা কুকুরের দুধ খাওয়াইয়া দেয়া হয়। এরপর থেকিয়া সুস্থ রহিয়াছে সে। তবে, তাহার হাত ও পায়ের নখগুলো কুকুরের মতো লম্বা, ছুঁচালো ও ধারালো হইয়া বাড়িতে থাকে। কেহ ব্লেড দিয়া কর্তণের চেষ্টা করিলে, ব্যাথায় চিৎকার করিয়া সে তাহাকে কামড়াইতে উদ্যোত হয়।
এটুকু শুনবার পর মা অবাক হয়, রিরি করে ওঠে। মা কি আমার কথা ভাবে? মা এইতো আমি—আমি চেঁচাই। শোনা যায় না হয়তো। কাকা আরো কি বলে, মা হাসে। আমার তখন বড় ওয়ানের পড়া। এই ক্লাসেও আগের ক্লাসের পাখপাখালি ছড়ার বইটা ...আবার। ভর্তির দিন দিয়েছে আমিনা আপা। আমিনা হলো আয়া। আয়া আপা। আমাদের পানি দেয় টিফিনের সময়। টিফিনে দুধ পাউরুটি, না হলে ডিম টোস্ট। আমি পড়ি-
ঈ-তে ঈগল... ঈগল রে ঈগল, এতো বড় ডানাটা তোর কে দিয়েছে বল?
অথবা পড়ি—আল্লাহোর কুদরত বোঝা বড় দায়,
আবাবিল ঢিল ফেলে কাফের পালায়... কাফের পালায়... এ এ... কাফের পালায়

আচ্ছা কাফের কেমন, মাকে জিজ্ঞেস করবো? মা তো হাসছে, কাকাও হাসছে। আমার ভয় করে—রাহেলা যদি ছবি থেকে বের হয়ে কামড়ে দেয়। মেয়েটার কী লম্বা চুল! কাটতে দেয় না বুঝি? কামড়ে দিবে না তো? কুকুরের কামড়ের মতো তখন নাভিতে ২৪টা সুই দিতে হয়? মা আমার ভয় করে মা! মা আমার ভয় করে! উঠোন থেকে অভয় আসে-‘কান্দিস্ না। এইতো লাল, আমি আগিনায়, পড়ো, পড়ো’। শরীর শক্ত হয়ে আসে, মাংসপেশী কেমন কুঁকড়ে কুঁকড়ে যায়। দেয়ালে আঁচড় কাটি। দেশলাই বাক্সের রেলগাড়ি দেয়ালে চলে পু-ঝিক-ঝিক। আমি ড্রাইভার। স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে নিজেই ইঞ্জিন ঠিক করি, নাট-বল্টু টাইট দেই... নাট-বল্টু-স্ক্রু-টাইট। স্কু-ড্রাইভারের গুতো লাগে নিজের নখে। মা, মা! আমি ডাকি মা মা! কে যেনো হন্তদন্ত দৌড়ায়। হঠা ঘোর কেটে গেলে দেখি আমার নখগুলো রাতারাতি বেড়ে গেছে অনেকখানি। কালকেই না কাটলাম! বড় নখে এর মধ্যেই বেশ কালো কালো ময়লাও জমে গেছে।
টুকি খুব সাফসুতরা। ঠিক তা না—বাজার চলতি। যদিও তার এই বাজার চলতি ভাবটা আমার সয় না। তবু কেমন যেন... আজ ওর সাথে দেখা হবার কথা। আজকাল বেজায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি ওর ওপর। ঠিক নির্ভরশীল না, বোঝানো যাবে না। ঠিক সে সময়েই রেহান ভাই, আমাদের এডিটর (জুনিয়র) তাড়া দিলেন...
—কি? দুপুরে কি দিচ্ছো? এই যে বুশের বাজেট আটকায় দিলো কংগ্রেস। প্যাকেজ দেও। স্ক্রিপ-টিস্ক্রিপ্ট আগে দেখাইও। নাইলে শেষ সময়ে দেখতে পারি না। রিপোর্টারা এসাইমেন্ট থেকে আসলে ওদের স্ক্রিপ্ট দেখতে হবে। তোমাদের ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কের এই একটা বদ খাসলত, এক্কেবারে লাস্ট মোমেন্টে স্ক্রিপ্ট দেখাইতে নিয়ে আসো। আমি নখ খুঁটতে খুঁটতে বলি—
—রোহান ভাই, নখ একদিনেই এতো বড় হয়? বলেই নিজের আঙ্গুল দেখাই। (কেমন গ্লেসি ভাব নখগুলনের, দেখছেন! এ কথা মেয়েলি শোনাতে পারে বলে বলি না।) তবু স্বগতো উক্তির মতো বলি—বাঘের থাবা! পাঞ্জা!
রেহান ভাই রসিক লোক, বলে—বাঘ না, বাঘিনীর থাবা। বিয়া করো বুঝবা নখ কি, আর বাঘিনী কি জিনিস! সোনার মাথায় যখন চিমটি কাটবো বুঝবা তখন! কথা আর এগোয় না। মনে হয় নখগুলো ধারালো হয়ে উঠছে। রক্ত চাই রক্ত। না, নখগুলো কাটা দরকার। কাটা দরকার। এভাবে বড় হয় নখ!

ঘঙচ: কান্তির রিকসা

ঘুম থেকে উঠে ঘুম-ঘুম প্রলেপটা হাতের উল্টো পিঠে খেদাতে গিয়ে মনে হলো একটা উষ্ণ ধারা বইছে। চোখের পাতা থেকে গলগল ঝরল রক্ত আর কালচে হয়ে জমাট বাধল মুখে। বন্ধুরা বলল মেঘ জমেছে, মন খারাপের মেঘ। যতই বলি—না তা না; বিশ্বাস করে না কেউ। বিড়ম্বনার অন্ত থাকে না। কোথায় টুকি? টুকি-টুকি! আমার একটা নেইলকাটার লাগবে।

ঘন্টা হিসেবে রিকসায় ঘুরতে আর ভালো লাগছে না। টুকিই বললো দিদির কথা। দিদি বলতে বান্ধবীই আর কি। —আচ্ছা দিদির ছেলে না মেয়ে রে?কি বলবো, আমিই তো জানি না। এক সময় একই কাসে ছিলাম। ফরিদ ভাইয়ের সাথে ভাব হবার পর কেমন যেন দূরত্ব হয়ে গেলো। বছর খানেক হলো বাচ্চা হয়েছে রেখার। আজ যে যাব, কিন্তু ঠিকানা যে জানি না! বার কতক ফোন করে মনে হয়েছে ফরিদ ভাই চায় না পুরনো বন্ধুরা রেখার সাথে যোগাযোগ রাখুক, তা সে যতই আমি দিদি-দিদি করি। পহেলা বৈশাখের দিন টুকি আর আমি যখন ঘুরতে ঘুরতে কান্ত, তখন ভাবলাম দিদির ওখান থেকে ঘুরে আসি। ফোনে ফরিদ ভাইয়ের কাছে ঠিকানা চাইবার আগে কেমন যেন ভারী শোনালো কণ্ঠ, আর ঠিকানা! কিন্তু আজ ফোন করলো টুকি।
—হেঁ, লেখ না (আমাকে উদ্দেশ্য করে) হ্যাঁ, ''ক'' বাজার, ''ঙ'' রোড, সেক্টর ''ত''- এইতো? হে হেঁ।
ঠিকানা লেখা হলে রিকসাওলাকে যেতে বলি ''ক'' বাজারের দিকে। আমার দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত হাসি দেয় টুকি।
—দিদির মোবাইল নাকি ওর বাচ্চা হিসি করে নষ্ট করে দিছে।
—শুনলি না ছেলে না মেয়ে? বাচ্চাটার জন্য কিছুতো নিতে হইতো। কি নিয়ে যাবো?
—আরে ছেলেই হবে। মেয়ে হিসি করে মোবাইল নষ্ট করলে কেউ বীরত্ব দেখায় বলে নাকি?
টুকির এই ফেমিনিস্ট এটিচ্যুট আমার ভাল লাগে না। কিন্তু সমাজটাতো এখনো পুরুষতান্ত্রিক—তা অস্বীকার করি কেমন করে?
প্রসঙ্গ ঘুরাতে বলি
—নেইলকাটার আনছিস্?
—হে বাবা হে! দিদির বাড়ি গিয়ে কেটে দেবো।

ছজঝ: ঘোরের বিস্তার

দিদির ননদিনী এসছিল পশ্চিমবাংলা থেকে। মাঝে ফোন করলো মৌসুমী—টুকির সাথে খুব ভাব। গা-জ্বলে আমার। আল্টিমেটলি নখগুলো নানান কারণে কাটা হয়নি। এরপর আসে রাত। অনেক রাত করে চলছিল ঘোরের বিস্তার। আবার দিন। টুকি এলো আবার।

প্রবর্তণা’য় বসে বসে আমি আঙুল খুঁটি। আজও নেইলকাটার আনে নি। কথা হয়, দীপেনের ব্যাপারে, অসিতের মারমুখি যুক্তি নিয়ে। কিভাবে অসিত বলল—আর ফোন করবে না। নখের ভেতরে নখ ঢুকিয়ে বলি—চিন্তা করিস না... ফোন করবে, করবে। হাসি মুখে টুকি বলে, ‘তোর এতো মাথা ব্যাথা কেনো? হিংসা হয়?’ বলি—‘ওকে মিস করিস তো, ঠিক না? আর অন্যের ঘ্রাণটা আমার বড় উটকো লাগে। মনে হয় অনধিকার চর্চা।’ বাঘের গন্ধ এলাকা নির্ধারণ করে। যে তুষার ঝরার কথা কাল, আমি বলি- আজই আস্তর পড়ুক পুরু। তীরের অপোয় প্রতি মুহূর্তে মরতে ভালো লাগে না। ভয় পাই না, ভাল লাগে না—আর কি। এসময় আমার সত্যি সত্যি ঘুম পায়। ঠিক ঘুম নয়, আমি পালাতে চাই। যতণ ঘুম ততক্ষণ নিঃশর্ত বিষাদের বিস্মৃতি। ঘুম থেকে উঠলেই ‘ধরা’। ক’টা সকাল হলো? ক’টা? কোন বার? পেপারওলা রক্তমাখা খবরের কাগজ দিয়ে গেলো না এখনো? কি খাবো চায়ে ভিজিয়ে? টোস্টে শক্ত কামড়ের বলটা পাবো কোথায়? আজ কোন বার? বুধ, মঙ্গল... মঙ্গল আমার জন্মবার... জন্মবার। এখন সকাল, ঘুম ভেঙেছে তো! সকাল তো?

ঞটঠ: রাত অথবা সকাল

বিকেলে আমরা মহাখালিতে আড্ডা দেই প্রায়। হিপহিপ সেলুনের পাশে কফিপার্লার। ওখানে না বসে আমরা বল্টুর টংঘরে বসেই কমফোর্ট ফিল করি। কাগজে দেখি বুধবার। বন্ধুদের সাথে বসে আছি। সোডিয়াম আর ৬ নম্বরের দুলানী হেড লাইটের আলো উৎপাত করে। এর মধ্যে সবাই হাসলো অট্টহাসি। দেখি, একটা মাদী কুকুর আর গাধী হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। জমির কনুইয়ের গুতো দিয়ে বলে, —দোস্ত মালটা জোস্ না? আইজ-কাইল সইহ্য হয় না মামা!আমি অবাক হই। এরকম অবাক আমি প্রায়ই হচ্ছি। ওদের শিষ প্রায়শ উদ্দেশ্যহীন ও দূর্বোদ্ধ ঠেকে।—মাইনষে কষ্ট পাইলে এল্টেন জনের মতোন হোমো হইবার পারে, তাই বইলা কুত্তা-বিলাই কিছু মানবি না? তুই কি কোছ... গোছের কিছু বলতে গিয়েও আমার মুখ দেখে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে অথবা কোনো আধাত্মিক মর্মবাণী উদ্ধারে চেষ্টা চালায়। কিন্তু বাগড়া দেয় নিবেল, আমাদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি... পৈত্রিকসূত্রে হিন্দু—মোডেলিংয়ের ছবি তোলে। খানিকটা ডেসপারেট কিছিমের ভোমরা নিবেল বলে—দেখ সুদর্শন, সব সময় আতলামি করবি না। খেচাখেচি ভাল লাগে না সব সময়।—আরে আতলামি কোথায়? তোরা মাল দেখলি কৈ?—আরে বানচোত দেখবা কেমনে, ওই নাটকের ফ্লপ-নাইকা তোর মাথায় পাগলামি পোন্দাইতাছে। হেয় নাকি আবার অনার্সে ফাস্ট কাস পাইতাছে!

আমি বুঝি, কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে। ঘোর নাকি মালের নেশা বুঝতে পারি না। হাত দিয়ে চোখ কচলাই। উহঃ কেটে যাচ্ছে। বন্ধুরা এ ধরনের মধুর খোঁচা দিয়েই থাকে। ওতে কেউ কিছু ধরে না। আমিও না। এই যেমন বাবনার মামাতো বোন ওর সাথে শ’দেড়ক ডেটিং শেষে রুবেলকে প্রস্তাব দিলো কক্সবাজারের, আর বিয়ে করলো একটা টেকো আমলাকে। এ নিয়ে রসিকতায় বাবনা নিজেই তাল দেয়—কইস না দোস্ত দুঃখে বাইনচোদ হইয়া গেলাম। আমিও কিছু মনে করি না। তখনই একটা ৬ নম্বরের হেড লাইটের আলো চোখে ঢু মারে। উহঃ চাক্কু, ক্ষুর! দুহাতে চেপে ধরি চোখ। কেমন নীলচে অন্ধকার। পাশে হিপহপ সেলুনে পরিমল’দা বাড়তি টিপসের আশায় কাস্টমারের “শরীল বানায়”। এরপর... কতক্ষণ আমার ঠিক মনে নেই।

আজ নাকি আমি রেগে গিয়ে নিবেলকে স্টেপ করেছি! আরও অবাক, আমি নাকি তাকে গালি দিয়েছি মালাউন বলে। কিছু মনে করতে পারি না। টুকি! টুকি! অসিত ফোন করে না টুকিকে...অসিত হিন্দু... টুকির মন খারাপ... ফোন পায় না। আমার ফোনের অপোয় থাকে টুকি। কেনো? ফোন পেলে টুকি গলে গলে পড়ে পেরেক বৃষ্টির মতো, ত-বিত ভিজি; খুঁটে-বাঁধা প্রেমিক আমি।

কখগ অথবা পূনরাবৃত্তি: কখগ

রাতে হাসপাতালে নিবেলকে দেখতে গিয়ে মর্মপীড়ায় ভুগি। কয় সুতার জন্য ডান চোখটা বেঁচে গেছে। আবার আরাম বোধও করি মনে মনে। ‘বন্ধু’ বলে থানা-পুলিশ হয়নি। হলে কি হত? হাজতবাস, লাল দালান! তবু এর চেয়ে কারাগার কি ভালো ছিলো না? ইউনুস, বয়ান করুন —মাছের পেটে কতটা নিরিবিলি ধ্যাণমগ্ন থাকা যায়? জুলেখার ধারালো ফাঁদের মতো রোশনাইয়ের টানকে কতটুকু অবজ্ঞা করা যায় মাছের পেটে? ইউসুফ—পারলে বয়াণ করুন। বয়াণই মূখ্য। এক চোখা বিচারক আমার, হে নগরকর্তা, আমাকে বন্দী করুন, দন্ড দিন, করুন ক্রুশবিদ্ধ —মূর্খ আমি আজীবন ভীতু শিশু। মা আমার ভয় করে। কে বলে ভয় করে?
নিয়নের চিটচিটে আঠা মেখে বাড়ি ফিরি। চুলে আটকে থাকে ঘোলাটে অন্ধকার। উশখুশ বারান্দাটা বড্ড বেশি খাঁ-খাঁ। বেরিয়ে পড়তে হবে আঁধারকে, আঁধার থেকে। কিন্তু কোথায়?

ঘুম আসে না; আসে ঘোর। মাধ্যাকর্ষণ ছিড়ে নেমে আসে মধ্যরাত; বারগার্লের মতো ঝুঁকে বুক দেখিয়ে সার্ভ করে মহুয়ার মদক। বুকে লাল রক্ত! লাল রক্ত! মা বলে, দেখো না দেখো না লাল, চোখ বন্ধ করো... বন্ধ করো। আমাকে অভয় দেয় বদলেয়ার—সময়ের নিপীড়িত ক্রীতদাস হবার চেয়ে বড় মাতাল হোও...।

তখনই মনে পড়ে—ক্ষুর না, আমার নখ লেগেই কেটে গেছে নিবেলের গাল... কিন্তু তাতেই নয়টা সেলাই! কেউ বিশ্বাস করবে না। সমস্ত সততা দিয়ে সাক্ষী মানি তারাদের। তখনই লক্ষ্য করি আমার হাতের নখগুলো সব গিলোটিনে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। কী ধার! কী তেজ ধার!

রক্তে সয়লাব চারদিক, মেঝে-ঘর-বাথরুম। ধারের কাছে আর কোন অক্ষত অন্তর নেই! লাকড়ির মতো পড়ে আছে এই যে আমার শরীর। নিজেই নিজের চোখ উপড়াই, ছিড়ে ফেলি কান। আমি না, নখ; নখ না গিলোটিন! গিলোটিনগুলো এগিয়ে যায় যুগপত গলা ও শিশ্ন বরাবর।

ভিজে যাচ্ছি। বৃষ্টি কি আকাশের রক্ত? আমি এখন সাঁতার দিচ্ছি কেদো জলার হাসুবুড়ার পুকুরে। বৃষ্টি বৃষ্টি। পকুরে গোছল করতে করতে খেলার সাথী মুক্তাকে শুধাই—বল তো মুক্তি কোথায়? মুক্তা হাসে—ফড়িং ধরতে যাবি? বলেই আমায় ফেলে দে ছুট। আমি দৌড়াই পেছন পেছন... ধরতে পারি না। টুকি আমি ধরতে পারি না। টুকি-টুকি আমি জানি আশপাশেই আছো তুমি। কিন্তু এটা কোন গাঁ, কোন মহকুমা, কোন গলি-ঘুপইচি-বাইলেন? চারপাশে পড়ে আছে গিলোটিনে কাটা সমস্ত ফড়িং। ধড়-মাথা-পাখা। আমি কি হাসছি?

No comments: